বরিশাল জেলার মানব পাচার মামলার দীর্ঘদিন পলাতক আসামী তরিকুল ইসলাম@ আল- আমিন (৩০)’কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১১।
মঙ্গলবার (২৩ মে) না’গঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন চর গোয়ালদী এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (২৪ মে) দুপুরে র‍্যাব-১১, নারায়ণগঞ্জ এর সিনিয়র এএসপি মিডিয়া অফিসার মোঃ রিজওয়ান সাঈদ জিকু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, অপরাধ দমন ও আইন শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধের অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারী ও পরিকল্পিত আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধী গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় এনে র‍্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১১, সিপিসি-১ নারায়ণগঞ্জের একটি আভিযানিক দল ২৩ মে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন চর গোয়ালদী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ওই এলাকার মোঃ আবদুল জলিল এর ছেলে বরিশাল জেলার গৌরনদী মডেল থানায় দায়ের হওয়া মানব পাচার মামলার পলাতক আসামী তরিকুল ইসলাম @ আল-আমিন (৩০)’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত সহ অন্যান্য এজাহার নামীয় আসামীরা সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। নিরীহ মানুষকে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা আত্মসাৎ করা ও দেশের বাহিরে বিক্রয় করা তার পেশা। ধৃত আসামী ও তার সহযোগীরা বিদেশে তথা মালয়েশিয়াতে চাকুরীর উদ্দেশ্যে লোক পাঠাতে পারে এবং মোটা অংকের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে এরূপ প্ররোচনা মূলক কথাবার্তা বলে মানুষকে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে প্রলুদ্ধ করে থাকে। এভাবে ভুক্তভোগী নিরীহ মানুষদের নিকট হতে অগ্রিম মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসামীরা আত্মগোপনে গিয়ে পলাতক থাকে। অতঃপর একের পর এক নিরীহ মানুষ আসামীদের প্রতারণার ফাঁদে পরে বিদেশ যাওয়ার লোভে জায়গাজমি, ঘর-বাড়ী বিক্রয় করে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।
র‍্যাব আরো জানায়, এজাহার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য। সে নিরীহ মানুষদের বিদেশ নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা আত্মসাৎ করে এবং দেশের বাহিরে বিক্রি করে। সে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানাধীন ধুড়িয়াইল গ্রামের জনৈক বাদী মোঃ নয়ন সরদার (৩৬), পিতা- মোঃ খোরশেদ সরদার কে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কাপড়ের দোকানে নিয়মিত এসে তাকে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে মোটা অংকের বেতনের চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিবে বলে প্রলুব্ধ করে। পরবর্তীতে আসামী ও বাদীর মধ্যে বিদেশে যাওয়ার খরচ বাবদ ৪ লক্ষ টাকার একটি চুক্তি পত্র সম্পাদিত হয়। চুক্তি পত্রের শর্ত অনুযায়ী বাদী মোট তিন ধাপে ৩ লাখ টাকা পাচারকারী চক্রের সদস্যের একাউন্টে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে গত ০৮-১০-২০২২ ইং তারিখে বাদী সহ ৫/৭ জনকে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে বিমান যোগে নেপালের কাঠমুন্ডুতে পাঠিয়ে দেয় এবং বাদীকে সেখানে জিম্মি করে আরো ১ লাখ টাকা দিলে তাকে মালয়েশিয়া পাঠাবে বলে কথা দেয়। কিন্তু তাদের কথা অনুযায়ী ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তাকে মালয়েশিয়া না পাঠিয়ে নেপালের কিছু দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রায় ২৫ দিন সেখানে মানবেতর জীবন কাটিয়ে নেপালে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তায় দেশে ফিরে আসে। পরবর্তীতে বাদী দেশে এসে আসামীদের বিরুদ্ধে বরিশাল জেলার গৌরনদী মডেল থানায় ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬/৭/৮/৯ ধারায় একটি মামলা রুজু করে, যার মামলা নং-০৯ (০৪) ২৩, তারিখ ১২-০৪-২০২৩ ইং ।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল জেলার গৌরনদী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *