নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাধীন বাবুরাইলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী “মোহাম্মদ রানা” হত্যার ৪ মাস ১২ দিন পর প্রধান আসামী স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রোজি @) রোজিনা (৩৫)’কে ঢাকার পল্লবী হতে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১১।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ডিএমপি’র পল্লবী এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার (২৬ মে) দুপুরে র‍্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্প এর কোম্পানী কমান্ডার, উপ-পরিচালক, স্কোয়াড্রন লীডার এ কে এম মনিরুল আলম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান,  র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, অপরাধ দমন ও আইন শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া যে কোন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য র‍্যাব ছায়া তদন্ত করে আসছে।
গত ৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ১নং বাবুরাইল এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী কর্তৃক ছুরিকাঘাতে স্বামীকে হত্যার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আহম্মদ আলী বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-১১, তারিখ-০৮/১২/২০২২। উক্ত ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয় যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উক্ত ঘটনার পর আসামী রোজিনা আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে গিয়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারন করে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিল। সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দিয়ে কাজে নিযুক্ত হয়। উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি। সংগ্রহসহ চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতারের জন্য র‍্যাব-১১, সিপিসি-১ এর একটি চৌকস আভিযানিক গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। অতঃপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় আসামী রোজিনা ডিএমপি, ঢাকার পল্লবী এলাকায় শতাব্দী আনন্দধারা হাউজের একটি বাসায় নিজের পরিচয় গোপন করে কাজের বুয়ার পেশায় নিযুক্ত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-১১, সিপিসি-১ এর চৌকস আভিযানিক দল ২৫ মে ২০২৩ ইং তারিখে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় উক্ত হাউজ হতে রানা হত্যা মামলার প্রধান আসামী স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রোজি@ রোজিনা (৩৫), পিতা- লিয়াকত হোসেন, মাতা- মৃত সাহিদা বেগম সাং- শিখারপুর, থানা- উজিরপুর, জেলা- বরিশাল এ/পি-সাং-ব্যাপারী পাড়া, বাবুরাইল, থানা- নারায়ণগঞ্জ সদর, জেলা- নারায়ণগঞ্জ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।র‍্যাব আরো জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম মোহাম্মদ রানা নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন ১নং বাবুরাইল মোবারক শাহ রোড রাজন মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো এবং স্ত্রী রোজিনা ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানাধীন সিস্টোর নামক এলাকায় বসবাস করত। ভিকটিম মোহাম্মদ রানা একটি ঔষধ কোম্পানীতে এবং স্ত্রী একটি এনজিওতে চাকুরী করতো। স্বামী ও স্ত্রী দুজন দুটি আলাদা স্থানে চাকুরী করার কারণে আলাদা ভাবে বসবাস করতো। মাঝে মধ্যে স্ত্রী রোজিনা তার স্বামীর বাসায় এসে দেখা স্বাক্ষাৎ করে চলে যেত। দুজন ভিন্ন স্থানে বসবাস করার কারণে দুজনের সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং পারিবারিক কলহের রূপ নেয়। এই কলহের জেরে দুজনের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্ক লেগে থাকত। গত ০৭ / ১২ / ২০২২ ইং তারিখ আসামী রোজিনা তার স্বামীর বাসায় আসলে ভিকটিম তার বাবাকে স্ত্রীর বাসায় আসার বিষয়ে ফোন করে জানায় এবং ভিকটিমের বাবা ফোন পেয়ে বাসায় এসে তাদের সাথে দেখা করে চলে যায়। ঘটনার দিন গত ০৮/১২/২০২২ তারিখ রাতে ভিকটিমের স্ত্রী রোজিনা ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিমকে এ্যালোপাথারি কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। ভিকটিমের চিৎকার শুনে পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রেশমা বেগম এসে দেখতে পায় ভিকটিম গুরুত্বর আহত অবস্থায় পড়ে আছে এবং ভিকটিম রেশমা বেগমকে জানায় তার স্ত্রী তাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে পালিয়েছে। পরবর্তীতে বাসার মালিক ও আশেপাশের লোকজন ভিকটিমকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপালে নিয়ে যায়। উক্ত হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম রানাকে মৃত ঘোষণা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *