বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের পর রাজশাহীতে নির্মাণাধীন সবচেয়ে বড় স্থাপনা বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারও এখন দৃশ্যমান হয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুু নভোথিয়েটারের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশনের কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের মার্চেই এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন রাজশাহী বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও বোটানিক্যাল গার্ডেন সম্মুখ অংশে দুই দশমিক তিন শূন্য একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে এই নভোথিয়েটার। ইতোমধ্যে অবকাঠামো কাজ শেষ হওয়ায় মাথা তুলেছে নভোথিয়েটার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল অবকাঠামোর কাজ শেষে এখন চলছে অভ্যন্তরীণ ফিনিশিং। ভেতরে টাইলস, সিলিং, এসি লাগানো ও কাচের কাজ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্মাণাধীন এ নভোথিয়েটারে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল প্রজেক্টর সিস্টেমযুক্ত প্ল্যানেটরিয়াম, ৯-ডি, ৫-ডি হল, বঙ্গবন্ধুু শেখ মুজিব কর্নার, সায়েন্টিফিক লাইব্রেরি, টেলিস্কোপ, কম্পিউটারাইজড টিকিটিং অ্যান্ড ডেকোরেটিং সিস্টেমসহ নানা সুবিধা থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্যোগেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। শুরুতে ২২২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় ধরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রাজশাহী’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল রাসিক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি এখন বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদফতর।

জানা যায়, ২০১৫ সালের আগস্টে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এটি প্রথম অনুমোদন পায়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই একনেকে পাঠানো হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ হয়। প্রথমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সময়কাল ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। একনেক সভায় সময়সীমা ৬ মাস বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে মহামারি করোনা ও নানা জটিলতার কারণে এক দফা সংশোধন হয়ে সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ২৩২ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর কাজ শুরু হয়। এরপর করোনার কারণে কিছুুটা বিলম্বিত হয়। পরে সংশোধিত প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয় ২০২৩ সালের জুন। তবে এর আগেই কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতর।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিশেষত মহাকাশ সম্পর্কিত জ্ঞান সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করা, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কুসংস্কার দূর করতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক নাগরিক তৈরিতে বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধা রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে দেয়াই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদ বলেন, নভোথিয়েটারের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিং কাজের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে চলতি বছরের মার্চেই দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের বড় তেমন পরিবর্তন আসেনি। একবার আরডিবিবি সংশোধন করা হয়েছে। নভোথিয়েটার একটি বিশেষায়িত কাজ। প্রকল্পের যখন ডিজাইন করা হয়, তখন অনেক কিছুই ধারণা ছিল না। পরে এখানে বেশকিছু বিজ্ঞাননির্ভর আইটেম সংযোজন করা হয়েছে। ৫-ডি, ইমার্সি ব্রাইট, টেলিস্কোপ সংযোজন করা হয়েছে।

এরই প্রেক্ষিতে একবার আরডিবিবি করা হয়েছে। নির্ধারিত যে সময় অর্থাৎ চলতি বছরের জুনের আগেই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এই নভোথিয়েটারে প্ল্যানেটরিয়াম, ৯-ডি, ৫-ডি হল, মুজিব কর্নার, সায়েন্টিফিক লাইব্রেরি ও ক্যান্টিন সুবিধা থাকবে। নিরাপত্তা বিবেচনায় ১২০টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীতে নভোথিয়েটার স্থাপনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রথম চিঠি দেন। মূলত এরপর থেকেই শুরু নভোথিয়েটারের স্বপ্নযাত্রা। সংশ্লিষ্টরা জানায়, নভোথিয়েটারে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল প্রজেক্টর সিস্টেমযুক্ত প্ল্যানেটরিয়াম, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ডিজিটাল এক্সিবিটস, ফাইভ-ডি সিমিউলেটর থিয়েটার, টেলিস্কোপ, কম্পিউটারাইজড টিকিটিং অ্যান্ড ডেকোরেটিং সিস্টেমসহ নানা সুবিধা থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *