নারায়ণগঞ্জ বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের সরকারি খাল উদ্ধার ও ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলার চেষ্টা চালায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা।এসময় রফিকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী মারধর করার জন্য চড়াও হয় এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়।এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই সাংবাদিক।

১০ মে (বুধবার) দুপুরে সোনাকান্দা হাট সংলগ্ন নতুন ব্রীজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ বিবরনীতে জানা গেছে,সরকারি খাল উদ্ধারের নামে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের সেচ্ছাচারীতা এবং আগ্রাসনে আশপাশের বহু নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সরকারের কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী।ফলে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলছে নিকটস্থ বাড়ির বাসিন্দাদের।এছাড়া সরকারের কয়েক কোটি টাকা গচ্ছা যাওয়ার আশকা করা হচ্ছে।সিটি কর্পোরেশনের যথাযথ তদারকি না থাকায় ইচ্ছেমতো কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।একপর্যায়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রতিবাদের মুখে খালের কিছু অংশের ডাস্ট ও ব্যাবহার অযোগ্য মাটি সরিয়ে ফেলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুবই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।শুরু থেকে এসব অনিয়ম চলে আসলেও রহস্যজনক কারণে নাসিক’র দায়িত্বশীল কাউকে তদারকি করতে দেখা যায়নি।এমনকি অনিয়ম ও অসঙ্গতি প্রমান হলেও নুন্যতম ব্যাবস্থা গ্রহণের নজির নেই।

হামলার শিকার ওই সাংবাদিক জানান,সরকারি খাল উদ্ধার ও ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়মের বিষয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পরে রাতের অন্ধকারে বেশকিছু নিম্নমানের ব্লক ও নির্মান সামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়েছে।।আজ বুধবার দুপুর অনুমান ১ টার দিকে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের লোক রফিক তার সাথে আরও কয়েকজন কে নিয়ে তার ওপর চড়াও হয় এবং হামলার চেষ্টা করে।তাদের দ্বারা যেকোনো ক্ষতির আশংকায় রয়েছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজিপুর এলাকার মনির হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া রফিক নিজেকে মেয়রের ঘনিষ্ঠ লোক পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। সে উচ্চস্বরে সাংবাদিককে হুমকি দেয় এবং চিৎকার করে বলে,এসব নিউজে আমাদের কিছুই হবেনা।বেশি লেখালেখি করলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুমকি ধামকি দেয়।পরে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সাংবাদিক বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

নাসিক ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেনশাহ আহম্মেদ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ নিন্দনীয় এবং খুবই ন্যাক্কারজনক জনক।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সোনাকান্দা হাট থেকে মাহমুদ নগর খাল উদ্ধার ও ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে।ব্যাবহার অযোগ্য মাটি,বালু, ইট,পরিমানের চেয়ে অনেক কম সিমেন্ট ব্যাবহার করা হয়েছে। এককথায় খুবই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।একপর্যায়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের জোরালো প্রতিবাদের মুখে হাটের নতুন ব্রীজের সাথে কিছু অংশের পচা ডাস্ট মাটি সরিয়ে নিয়ে নতুন মাটি দিয়ে ব্লক বসায়।

এলাকাবাসীর দাবী, ।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতি ও অনিয়মের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বাড়ির বাসিন্দারা।নগরবাসীর জন্য অবকাঠামোগত সৌন্দর্য বর্ধন করতে গিয়ে তাদের জীবন ঝুকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে।এছাড়া মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সিটি নকশা অনুযায়ী প্রভাবশালী বাড়ির মালিকেদের দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধার করা হয়নি।বরং নিরীহ সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিক’র প্রভাবশালী ঠিকাদার ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা একেএম আবু সুফিয়ানের চাচাত ভাই পরিচয় দেওয়া ঠিকাদার মাসুম,ও এলিন,রাব্বি, হীরা,রফিক এবং হানিফ মিলে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সোনাকান্দা হাট থেকে মাহমুদ নগর খাল উদ্ধার ও ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজ করে আসছেন।জনসাধারণের নুন্যতম ক্ষতিসাধন না করে উন্নয়ন কাজ করার বিধান থাকলেও তাদের অমানবিক আগ্রাসনে খালের দু’পাশের অসংখ্য বাড়ি-ঘরের ক্ষতিসাধন হয়েছে।এমনকি নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ড এর ছায়াবীথি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য দেওয়া প্রায় ৪ লাখ টাকা মুল্যের একটি লোহার কালভার্ট উঠিয়ে নিয়ে যায় তারা। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা মনির হোসেনের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নাসিক’র এক প্রকৌশলীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।এ ঘটনা থানাপুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।পরবর্তীতে স্থানীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মধ্যস্ততায় মিমাংসা হয়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাসুম জানান,আমরা ৬ জন মিলে সোনাকান্দা হাট থেকে মাহমুদ নগর খাল উদ্ধার ও ওয়াক ওয়ে নির্মান করছি।নতুন ব্রীজের পাশে ভুলে কিছু নস্ট মাটি দেওয়া হয়েছিলো।পরে স্থানীয় কাউন্সিলর আপত্তি করেন।সাথে সাথেই ওই মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং ভালো মাটি দেওয়া হয়েছে।তবে কোনো অনিয়ম হয়নি।

জানতে চাইলে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এলিন ও হানিফ মিয়া জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে অবশ্যই ভালো আচরণ করা উচিৎ।তবে রফিকের এধরণের অসৌজন্যমূলক আচরণ দুঃখ জনক।

জানতে চাইলে রফিক নিজেকে সিটি কর্পোরেশনের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন,যেভাবে দেখিয়ে নিয়েছে,সেভাবেই কাজ করছি। তেমন কিছুই হয়নি।কাজ করতে গেলে কিছুটা ভুল বঝাবুঝি হয়।

উল্লেখ্য যে,গত নির্বাচনের আগে সরকারি খাল উদ্ধারের কাজ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন।যা এখনো চলমান রয়েছে।করোনা কালীন এসব উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকার পরে কয়েকমাস যাবত পূনরায় চালু করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *